যুদ্ধ বিজয়ের পঁচিশ বছরে এই প্রথমবারের মত কোনো দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রী কার্গিল বিজয় দিবসে কার্গিলে উপস্থিত হতে চলেছেন।
কার্গিল বিজয় দিবস ভারতের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। প্রত্যেক বছর ২৬ জুলাই  দিনটি কার্গিল বিজয়’ দিবস পালন করা হয়। শুক্রবার ,ভারতে কার্গিল যুদ্ধের বিজয়ের ২৫ তম বিজয় দিবস পালন করা হবে। ১৯৯৯ সালে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় দু-মাস ধরে  কঠিন পাহাড়ি এলাকায় তীব্র যুদ্ধ হয়ভারত এবং পাকিস্থানের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঐতিহাসিক ঘটনার ২৫তম বার্ষিকী স্মরণে ২৬ জুলাই২০২৪-এ লাদাখের দ্রাসে যাবেন। গত ২৫ বছরে যা কখনও হয়নি।
পাঁচ বছর আগে বিজয় দিবসের দুই দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের। তবে আবহাওয়ার কারণে জম্মুর রাজভবন সংলগ্ন হেলিপ্যাড থেকে তাঁকে নিয়ে উড়তেই পারেনি সেনাবাহিনীর চপার। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় যাতে কোনও ফাঁক না থাকেতাই মঙ্গলবার থেকেই এলাকার দখল নিয়ে নিয়েছে এসপিজি।
কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোর ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেওশান্তি স্বল্পস্থায়ী ছিল। পাকিস্তানি সৈন্য এবং জঙ্গিরা ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে শীতকালে জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় অনুপ্রবেশ করেছিলকাশ্মীর এবং লাদাখের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য কৌশলগত অবস্থানও দখল করে। এরপর মে মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী অনুপ্রবেশের বিষয়টি চিহ্নিত করেএরপরই শুরু হয় কার্গিল অপারেশন। তীব্র যুদ্ধের সাথে শুরু হয় অপারেশন বিজয়। টাইগার হিল পাকিস্থানি সৈন্য এবং জঙ্গিদের থেকে রক্ষা করে।
কার্গিলের চ্যালেঞ্জিং পার্বত্য অঞ্চলে টানা দু-মাস যুদ্ধ চলে অবশেষে ২৬ জুলাই যুদ্ধের অবসান ঘটে। এবং জয়ের মূল্য হিসাবে প্রায় ৪৯০ জন সৈন্য প্রাণ হারায়। তাই ২৬ জুলাই এই দিনটি  ভারতীয় সৈন্যদের সাহসিকতা ও  আত্মত্যাগের জন্য স্মরণ করা হয় এবং শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শুক্র সকালে দ্রাস ব্রিগেড হেলিপ্যাডে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন লাদাখের উপরাজ্যপাল অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বি ডি মিশ্র। প্রথমেই শহীদ সৌধে মালা দিয়ে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর যাবেন বীরস্থলে। যেখানে কার্গিল যুদ্ধের প্রত্যেক শহিদের নামাঙ্কিত স্মারক রয়েছে। দেখা করবেন বীর নারী অর্থাৎ শহিদদের স্ত্রীমায়েদের সঙ্গে।
এরপর যুদ্ধ স্মারক থেকে জাতির উদ্দেশে দেবেন ভাষণ মোদী। বিজয় দিবসের রজত জয়ন্তীর সাক্ষী থাকবেনকারগিল যুদ্ধে লড়াই করা দেশের বীর সৈনিকরা। সূত্রের খবরআরও একবার দেশবাসীকে তাঁরা শোনাবেন কীভাবে সেবার পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন ভারতীয় বীরেরা। ফের ওই ধরনের দুঃসাহসিকতা দেখালে পাকিস্তানের ভূগোল বদলে দেওয়ার বার্তাও দিতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বেদ প্রকাশ মালিকরা।
কারগিল বীর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপস্থিত হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ানতাঁদের পরিবার। এসেছে স্থানীয় বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়নের এনসিসি ক্যাডেটরাও। গোটা কারগিল যুদ্ধ স্মারক জুড়ে চলছে শেষ তুলির টান। বীর পথের দুধারে থাকা শহিদদের স্থায়ী মূর্তি ছাড়াও লাগানো হচ্ছে শহিদ বিক্রম বাত্রাগণেশ যাদবমনোজকুমার পাণ্ডেঅনুজ নায়ারদের ছবি। 
প্রধান ফটকের ঠিক উল্টোদিকে বসেছে নতুন ভাস্কর্য। সব মিলিয়ে চিরশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হওয়া শেষ যুদ্ধের রজত জয়ন্তী বর্ষে সেই গৌরবগাথা দেশবাসীকে আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারেও তাচ্ছিল্যের বার্তা পৌঁছিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে পুরোদমে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক