গত দশ বছর যাবত ভারত ও আমিরাত বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সফলভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে।
ড. প্রশান্ত কুমার প্রধান: গত এক দশকে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে অগ্রগতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্যতম সফল বৈদেশিক নীতি উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সময়ে আমিরাতের সাতটি সফর তার এই অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।
দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার সাক্ষ্য মোদীর উক্তি, যেখানে তিনি বলেন, “ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অগ্রগতির অংশীদার।”
ভারত ও আমিরাত বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সফলভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে। ভারত-ইসরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরাত-যুক্তরাষ্ট্র গোষ্ঠী এর অন্যতম উদাহরণ। আই২ইউ২ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য প্রযুক্তি, জ্বালানি, খাদ্য ও পানীয় নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়ানো।
এই কাঠামোর অধীনে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে, যা সমন্বিত খাদ্য পার্ক তৈরিতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও ঐক্যকে আরও মজবুত করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও, ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোর (আইএমইসি) প্রকল্পে আমিরাত ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এই বাণিজ্যিক রুটটি ভারত, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।
ভারতের জন্য একটি প্রধান সামুদ্রিক লিংক হিসেবে, আইএমইসি -এ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পটি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতা বৃদ্ধি করছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমিরাত সফরের সময়, আইএমইসি-এর জন্য আন্তঃসরকার চুক্তির স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা এই সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতীক।
ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের সময়, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে একটি অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে তারা ভারতের বিভিন্ন বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।
বাণিজ্য সম্পর্কের বিস্তৃতি
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা ২০১৩-২০১৪ সালের ৫৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩-২০২৪ সালে ৮৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০২২ সালে স্বাক্ষরিত ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে বাড়াতে, বিনিয়োগকে সহজ করতে এবং বাণিজ্য বাধা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এছাড়াও, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভারতে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতে ১৫.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভারতের সপ্তম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থান দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আবেদন ও ভারতের উন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ এই বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভারতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রুপে কার্ড এবং ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস লেনদেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
জ্বালানি নিরাপত্তায় সহযোগিতা
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি ভারতের অন্যতম প্রধান তেল সরবরাহকারী দেশ এবং কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) প্রোগ্রামের প্রধান অংশীদার।
২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময়, ভারতের আইএসপিআরএল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডিএনওসি-এর মধ্যে ম্যাঙ্গালোরে তেল সংরক্ষণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে প্রথম দেশ হিসেবে ভারতের এসপিআর প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী করে তোলে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রসার
ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে। উভয় দেশ নৌ ও বিমান মহড়া, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং উচ্চপর্যায়ের সফর আদান-প্রদান করেছে। ২০২৩ সালে ভারতের লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট তেজস সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ডেজার্ট ফ্ল্যাগ-৮’ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছে।
পরিশেষ
ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক