ভারত প্রতিবেশী প্রথম ও বসুধৈব কুটুম্বকম নীতির আলোকে নেপালের সঙ্গে আবারও শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন করছে
ভারত ও নেপালের জ্বালানি অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির ফলে, ভারতীয় অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসি) এবং নেপাল অয়েল কর্পোরেশন (এনওসি) একটি বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি অক্টোবর ৩, ২০২৪ তারিখে নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা নেপালে পেট্রোলিয়াম অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। চুক্তিটি ভারতের সঙ্গে নেপালে পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহন আরও সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
এই চুক্তির অধীনে অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষত, পরিবহন খরচ কমানো, রাস্তার ট্রাক ট্রাফিকের সমস্যা কমানো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেমন বন্যা ও ভূমিধসের সময় নেপালের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, পেট্রোলিয়াম সামগ্রীর হ্যান্ডলিংয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই চুক্তিটি নেপালের এনওসি’র নির্বাহী পরিচালক ড. চন্দিকা প্রসাদ ভট্ট এবং আইওসি’র পরিচালক সেন্টিল কুমার স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়ের সচিব পঙ্কজ জৈন এবং আইওসি চেয়ারম্যান ভি. সত্যিশ কুমার উপস্থিত ছিলেন।
এই সহযোগিতাটি ২০২৩ সালের মে মাসে ভারত ও নেপালের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সেই সময় উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এই সমঝোতা বিনিময় হয়, যা ভারত ও নেপালের শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি এই সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, এটি নেপালের জ্বালানি অবকাঠামো শক্তিশালী করবে, খরচ কমাবে এবং নেপালের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য সরবরাহ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। তিনি এক্সে পোস্ট করে এই উদ্যোগকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ভারতীয় দার্শনিক ধারণা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর ওপর জোর দেন, যার অর্থ ‘বিশ্ব এক পরিবার’।
চুক্তির অধীনে মূল প্রকল্পসমূহ:
এই চুক্তির অধীনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যেমন:
· সিলিগুড়ি থেকে চারালি পাইপলাইন: ভারতের সিলিগুড়ি থেকে নেপালের ঝাপায় অবস্থিত চারালিতে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে, যা পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহনকে আরও কার্যকর করবে এবং রাস্তা নির্ভর ট্যাঙ্কার ট্রাকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।
· চারালিতে স্মার্ট গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল: চারালিতে একটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে, যা অঞ্চলের সংরক্ষণ ও বিতরণ কার্যক্রমকে আরও উন্নত করবে। এই টার্মিনালটি নেপালের চাহিদা কেন্দ্রগুলোতে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
· আমলেখগঞ্জ থেকে লোথার পাইপলাইন: ভারত সরকার নেপালের চিতওয়ান জেলায় অবস্থিত আমলেখগঞ্জ থেকে লোথার পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদান করবে। এই পাইপলাইন সরবরাহ চেইনকে আরও কার্যকর করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পয়েন্টগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।
· লোথারে স্মার্ট গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল: লোথারে ৯১,৯০০ কিলোলিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এনওসি এটি নির্মাণ করবে এবং ভারত সরকারের প্রযুক্তিগত সহায়তা পাবে। এই অবকাঠামোটি নেপালের জ্বালানি নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
এই প্রকল্পগুলির মোট বিনিয়োগ প্রায় ১৫ বিলিয়ন রুপি হবে।
এই চুক্তিটি শুধু জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারত ও নেপালের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর করার একটি বড় পদক্ষেপ। পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন এবং সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সংহতির সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি নেপালের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভারতের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য জ্বালানি অংশীদার নিশ্চিত করবে।
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়ের সচিব পঙ্কজ জৈন বলেন, “ভারতীয় অয়েলের প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং এই সহযোগিতা শুধু ভারত-নেপাল সম্পর্ক শক্তিশালী করবে না, বরং নেপালের জ্বালানি নিরাপত্তাও বাড়াবে।”
এই চুক্তি ভারত-নেপাল জ্বালানি অংশীদারিত্বের একটি নতুন মান স্থাপন করবে, যা উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক