ভারত ও চীন অক্টোবর ২০২৪ সালের সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্নতা চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
বেইজিংয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মধ্যে একটি বিশেষ প্রতিনিধি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার এই বৈঠকে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ‘ন্যায্য ও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য কাঠামো’ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা করা হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষবারের মতো সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনা করেছিলেন দোভাল ও ওয়াং। এরপরের সব বৈঠক ছিল বহুপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই দুই রাষ্ট্রপ্রধান সরাসরি সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে মতবিনিময় হয়। সীমান্তে নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা করার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বৈঠকে উভয় পক্ষ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার গুরুত্ব নিশ্চিত করেছে।’

২০২৪ সালের অক্টোবরে সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সাম্প্রতিক চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে উভয় পক্ষ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও চীনের সেনারা পূর্ব লাদাখের ডেমচক এবং দেপসাং এলাকায় প্রতি সপ্তাহে পালা করে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নভেম্বরে প্রথম পর্যায়ের টহল সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় পক্ষ পর্যায়ক্রমে প্রতি সপ্তাহে একবার টহল দেবে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের পর বন্ধ থাকা কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় চালুর বিষয়েও উভয় পক্ষ আলোচনা করেছে। তিব্বত অঞ্চলে অবস্থিত এই পর্বত ও হ্রদ হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জন্য পবিত্র স্থান।

পূর্ব লাদাখে ২০২০ সালের মে মাসে সংঘাতের পর থেকে দুই দেশ কারাকোরাম পাস থেকে কিবুথু পর্যন্ত সেনা মোতায়েন করে রেখেছিল। তবে বর্তমানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। বৈঠকে এই সংঘর্ষ থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়।

সম্প্রতি কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ হয়। এরপরেই সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে ও সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে উভয় পক্ষ শিগগিরই বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল।
এই বৈঠকের পরে অজিত দোভাল চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেং-এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে, সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উভয় পক্ষের কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা গেলে, শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয় বরং পুরো অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়ন জোরদার হবে। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের এ রকম আলোচনা ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।