বর্তমানে ভারতের ২৩টি শহরে ৯৯৩ কিলোমিটার মেট্রো রেল চালু রয়েছে, জানান আবাসন ও নগর বিষয়ক এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী।
ভারত দ্রুত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্কের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনোহরলাল এই লক্ষ্য তুলে ধরেন ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, দিল্লিতে আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের সাথে যুক্ত সংসদ সদস্যদের এক পরামর্শ কমিটির সভায়।
বর্তমানে ও ভবিষ্যৎ মেট্রো নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ
মনোহরলাল তার বক্তব্যে দ্রুত নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নগর পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বর্তমানে, ভারতের ২৩টি শহরে ৯৯৩ কিলোমিটার মেট্রো রেল চালু রয়েছে। এছাড়া, আরও ৯৯৭ কিলোমিটার মেট্রো নেটওয়ার্ক নির্মাণাধীন রয়েছে, যা ২৮টি শহরকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
তিনি বলেন, "মেট্রো নেটওয়ার্ক ভারতের নগর এলাকায় সবচেয়ে কার্যকর, পরিবেশবান্ধব এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহন মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি টেকসই নগর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
আঞ্চলিক দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম এবং প্রধানমন্ত্রী ই-বাস সেবা প্রকল্প
মেট্রো প্রকল্প ছাড়াও, ভারত আঞ্চলিক দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম প্রকল্পেও বিনিয়োগ করছে, যা বড় শহর ও নগর কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরি করে একটি সমন্বিত নগর পরিবহন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করবে। কমিটিতে আঞ্চলিক দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন কাঠামো ও অগ্রগতি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা হয়।
সভায় প্রধানমন্ত্রী ই-বাস সেবা প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৩ থেকে ৪০ লাখ জনসংখ্যার শহরগুলোতে ১০,০০০ ইলেকট্রিক বাস চালু করা হবে। প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের মাধ্যমে ই-বাস চালু।
- টেকসই বাস পরিচালনার জন্য ১০ বছরের সহায়তা।
- নতুন বাস বহরের জন্য ডিপোগুলোর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ।
- ই-বাসের জন্য বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়ন।
এই প্রকল্পটি নগর জনপরিবহনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে এবং ভারতের কার্বন নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতি পূরণে অবদান রাখবে।
‘ওয়ান নেশন ওয়ান কার্ড’ উদ্যোগ
ভারতের নগর পরিবহনে যুগান্তকারী উদ্ভাবন হলো ‘ওয়ান নেশন ওয়ান কার্ড’ উদ্যোগ। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্বোধন করা এই জাতীয় সাধারণ পরিবহন কার্ড একটি কার্ডের মাধ্যমে মেট্রো, রেল, বাস ও অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থায় ভ্রমণ সম্ভব করে। এই উদ্যোগ লক্ষ লক্ষ যাত্রীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ ও সমন্বিত করার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার একাধিক বড় শহরে মেট্রো প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। দিল্লি মেট্রো, যা ভারতের ফ্ল্যাগশিপ মেট্রো সিস্টেম, অন্যান্য শহরের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। ছোট শহরগুলোতে আসন্ন মেট্রো প্রকল্পগুলো সংযোগ বৃদ্ধি, যানজট হ্রাস এবং নাগরিকদের জন্য যাতায়াত সহজতর করবে।
মন্ত্রকের সভায় সংসদ সদস্যরা নগর পরিবহন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন শেষ মাইল সংযোগ, যাত্রীদের আরাম এবং মেট্রো পরিচালনার প্রসার নিয়ে আলোচনা করেন। মনোহরলাল কর্মকর্তাদের সদস্যদের পরামর্শ পর্যালোচনা এবং তা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
ভারতের মেট্রো নেটওয়ার্ক ও নগর পরিবহন ব্যবস্থা সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা টেকসই এবং কার্যকর নগর পরিবহন প্রচারে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে, ৫১টি শহরে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার মেট্রো রেল চালু অথবা নির্মাণাধীন থাকায়, ভারত নগর পরিবহন সমাধানে একটি বৈশ্বিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। প্রধানমন্ত্রী ই-বাস সেবা প্রকল্প ও ‘ওয়ান নেশন ওয়ান কার্ড’ উদ্যোগ এই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি জোর দিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিকে উত্সাহিত করার পাশাপাশি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের দ্রুত সম্প্রসারিত মেট্রো নেটওয়ার্ক এবং উদ্ভাবনী নগর পরিবহন সমাধানগুলো সারা বিশ্বের কাছে টেকসই উন্নয়নের মডেল হয়ে উঠবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্ক হিসেবে ভারতের এই অগ্রযাত্রা নগরবাসীদের জন্য দ্রুত, পরিচ্ছন্ন এবং আরও সহজলভ্য যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। এটি ভারতের নগর পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।