ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনই একমাত্র দেশ যারা সফলভাবে মহাকাশ ডকিং প্রদর্শন করতে পেরেছে।
২০২৪ সালের শেষ দিকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) একটি ঐতিহাসিক মিশনে প্রথমবারের মতো মহাকাশে ডকিং করার চেষ্টা করবে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪) এই স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট (স্পেডেক্স) মিশনটি শুরু হবে। এই সাহসী পদক্ষেপটি ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং উন্নত মহাকাশ কার্যক্রমে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে দেবে।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪) এই মিশনের ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, “স্পেডেক্স ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই মিশন আমাদের মহাকাশযান ডকিং প্রযুক্তিতে দক্ষতা প্রদর্শন করবে, যা মাত্র কয়েকটি দেশ আয়ত্ত করেছে। এটি উন্নত মহাকাশ অনুসন্ধানের পথ সুগম করবে, যার মধ্যে রয়েছে চন্দ্রাভিযান, আন্তঃগ্রহ অভিযান এবং ভারতীয় মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ।”

স্পেডেক্স মিশনের বিশদ
স্পেডেক্স মিশনটি পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (পিএসএলভি-সি৬০) থেকে শ্রীহরিকোটার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে উৎক্ষেপিত হবে। এই মিশনে ২২০ কেজি ওজনের দুটি সমান স্যাটেলাইট (এসডিএক্স০১ “চেজার” এবং এসডিএক্স০২ “টার্গেট”) ৪৭০ কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। তারা কক্ষপথে ডক এবং আনডক করার জটিল কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

প্রধান লক্ষ্যসমূহ: নির্ভুল রেনডিভু এবং ডকিং কার্যক্রম প্রদর্শন; ডক করা স্যাটেলাইটের মধ্যে বৈদ্যুতিক শক্তি স্থানান্তর নিশ্চিত করা; আনডক করার পর বৈজ্ঞানিক পে-লোড পরিচালনা, যা দুই বছর ধরে কার্যকর থাকবে।

চ্যালেঞ্জ এবং প্রযুক্তি
মহাকাশে ডকিং একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া যা নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয়ের প্রয়োজন। ২৮,৮০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে কক্ষপথে চলমান স্যাটেলাইটগুলোর আপেক্ষিক গতি ০.০৩৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় কমিয়ে ডকিং সম্পন্ন করতে হবে। ভারতীয় ডকিং সিস্টেম ব্যবহার করে স্যাটেলাইটগুলো একক ইউনিটে পরিণত হবে।

ডকিং প্রযুক্তি ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাল্টি-লঞ্চ কৌশল বাস্তবায়ন এবং মানব মহাকাশ অভিযান সমর্থন করতে সক্ষম।

স্পেডেক্স মিশনে ইসরো নিম্নলিখিত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে: স্বল্প প্রভাবযুক্ত এবং অ্যান্ড্রোজিনাস ডকিং মেকানিজম; উন্নত রেনডিভু ও ডকিং সেন্সর; স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়ের জন্য আন্তঃস্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা; নির্ভুল অবস্থান নির্ধারণের জন্য জিএনএসএস-ভিত্তিক আপেক্ষিক কক্ষপথ নির্ধারণ ও প্রচারণা (আরওডিপি) পদ্ধতি।

সফলতার পথে ধাপসমূহ
ডকিং প্রক্রিয়াটি পিএসএলভি থেকে স্যাটেলাইট বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে শুরু হবে। এসডিএক্স০১ ধীরে ধীরে এসডিএক্স০২-এর দিকে এগিয়ে ২০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে ৩ মিটারে আনবে। সেন্সরের মাধ্যমে অবস্থান ও গতি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য সরবরাহ করা হবে। ডকিং শেষে স্যাটেলাইটগুলো একত্রে কাজ করবে।

স্পেডেক্স মিশন পৃথিবী পর্যবেক্ষণ এবং মহাকাশ পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য বৈজ্ঞানিক পে-লোড বহন করবে।

এসডিএক্স০১-এ উচ্চ-রেজুলেশন ক্যামেরা থাকবে; এসডিএক্স০২-এ উদ্ভিদ পর্যবেক্ষণের জন্য মিনি মাল্টি-স্পেকট্রাল পে-লোড থাকবে; মহাকাশ বিকিরণ নির্ণয়ের জন্য রেডিয়েশন মনিটর থাকবে।

এই মিশন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রতীক। এটি মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে। জিতেন্দ্র সিং বলেন, “স্পেডেক্স আমাদের তারার পথে অভিযাত্রার এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা বহন করছে।” সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।