এই মহড়াটি বড় আকারের থিয়েটার লেভেল রেডিনেস অপারেশনাল এক্সারসাইজের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কাজ করবে।
ভারত আসন্ন উপকূলীয় প্রতিরক্ষা মহড়া সি ভিজিল-২৪ এর মাধ্যমে তার উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে চলেছে, যা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এই বৃহৎ পরিসরের প্রতিরক্ষা মহড়ায় ভারতের সকল উপকূলীয় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অংশগ্রহণ করবে, যার মূল লক্ষ্য ভারতের উপকূলীয় নিরাপত্তা কাঠামো উন্নত করা, পূর্ববর্তী মহড়াগুলোর ভিত্তিতে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করা। নৌবাহিনীর উপপ্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল তরুণ সোবতির নেতৃত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রধান পরিকল্পনা সম্মেলনে সি ভিজিল-২৪ এর রূপরেখা তৈরি করা হয়। এই সম্মেলনে বিভিন্ন সামুদ্রিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও নতুন কী রেজাল্ট এরিয়া (কেআরএ) সংযোজনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সম্মেলনে ভাইস অ্যাডমিরাল সোবতি উপকূলীয় হুমকির বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই পরিকল্পনা সভায় ভারতীয় নৌবাহিনী, ভারতীয় কোস্ট গার্ড, কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী, রাজ্য সামুদ্রিক পুলিশ, মৎস্য, কাস্টমস, গোয়েন্দা ব্যুরো এবং অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্র সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বিদ্যমান নিরাপত্তা ফাঁকসমূহ চিহ্নিত করেন, সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন এবং ভারতের উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্বিঘ্নভাবে সক্রিয় করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া কৌশল নির্ধারণ করেন।
সি ভিজিল সিরিজের মহড়া ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভারতীয় কোস্ট গার্ড ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে একটি কৌশলগত উদ্যোগ হিসেবে শুরু হয়। মুম্বাইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সি ভিজিল ভারতের উপকূলীয় প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রথম সি ভিজিল মহড়া জানুয়ারি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এর পরবর্তী পর্বগুলো ২০২১ এবং ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি মহড়া ক্রমশ বিস্তৃত হয়েছে, যা আন্তঃসংস্থা সমন্বয় মূল্যায়ন এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারকে কেন্দ্র করে। ২০২২ সালের মহড়ায় ৭৫১৬ কিমি উপকূলরেখা এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) জুড়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যেখানে উপকূলীয় রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, মৎস্য সম্প্রদায় এবং অন্যান্য উপকূলীয় নিরাপত্তা অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সি ভিজিল-২৪ এর লক্ষ্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য অর্জন:
উপকূলীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয়করণ: মহড়াটি ভারতের সমস্ত উপকূলীয় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সম্পদসমূহ সক্রিয়করণ এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি পরীক্ষা করবে।
আন্তঃসংস্থা সমন্বয় উন্নয়ন: উপকূলীয় নিরাপত্তায় একীভূত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন, তাই সি ভিজিল-২৪ বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সহজ যোগাযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে কাজ করবে। এতে ভারতীয় নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, সিআইএসএফ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা মূল্যায়ন: মহড়াটি সিমুলেটেড হুমকির পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া প্রোটোকলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করবে, যাতে ভারতের উপকূলরেখা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষিত থাকে।
সি ভিজিল-২৪ সকল স্তরের উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করবে, রাজ্য সামুদ্রিক পুলিশ থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা পরিষেবা পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিট যেন সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে।
সি ভিজিল-২৪ বড় আকারের থিয়েটার লেভেল রেডিনেস অপারেশনাল এক্সারসাইজ (ট্রোপেক্স)-এর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কাজ করবে। ভারতীয় নৌবাহিনী কর্তৃক দ্বিবার্ষিকভাবে পরিচালিত ট্রোপেক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা মহড়া, যা সীমানা প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে নজরদারি পর্যন্ত বিস্তৃত সামুদ্রিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলো অন্তর্ভুক্ত করে। সি ভিজিল এবং ট্রোপেক্স একসাথে ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে মূল্যায়ন এবং উন্নত করার একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রদান করে।
ভারতের সামুদ্রিক এলাকা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক রুটের নিকটে অবস্থান এবং বিস্তৃত উপকূলরেখার কারণে জটিল। উপকূলীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্য ও বিস্তৃত ইইজেড-এর উপর নির্ভরশীলতায় আরো বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি সি ভিজিল মহড়ায় প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ভারতের উপকূলীয় নিরাপত্তা প্রচেষ্টার কৌশলগত এবং পরিচালনামূলক দিকগুলোকে প্রভাবিত করে।
২০২২ সালের সি ভিজিল মহড়ার অভিজ্ঞতা যেমন উন্নত যোগাযোগ প্রোটোকল, আন্তঃসংস্থা সহযোগিতা বৃদ্ধি, এবং সম্পদের উন্নত ব্যবহারের দিকে নির্দেশ দিয়েছে। এই মহড়াগুলো দেখিয়েছে যে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা একটি কার্যকর উপকূলীয় প্রতিরক্ষার জন্য অপরিহার্য, যেখানে প্রতিটি সংস্থা তাদের অনন্য ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা দ্বারা সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোতে অবদান রাখে।
বিশেষত, পূর্ববর্তী মহড়াগুলো স্থানীয় সম্প্রদায়, বিশেষ করে মৎস্য ও উপকূলীয় গ্রামের অংশগ্রহণের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এই সম্প্রদায়গুলো প্রায়শই পর্যবেক্ষণের প্রথম লাইন হিসেবে কাজ করে এবং উপকূল বরাবর অস্বাভাবিক কার্যকলাপের প্রাথমিক সতর্কতা দিতে পারে। নাগরিক অংশগ্রহণ সহ একটি যৌথ পন্থা গ্রহণ করে সি ভিজিল মহড়াগুলো উপকূলীয় নিরাপত্তার একটি সামগ্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা নিশ্চিত করে।
সি ভিজিলের চতুর্থ পর্ব ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে, ভারতের নিরাপদ এবং দৃঢ় উপকূলরেখা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা স্পষ্ট। বিভিন্ন অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করে, সি ভিজিল-২৪ ভারতের উপকূলীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ যেন যেকোনো হুমকির জন্য প্রস্তুত থাকে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি মহড়ার সাথে ভারত তার সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করে, একটি সুরক্ষিত উপকূলরেখার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা উদীয়মান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে সাড়া দিতে সক্ষম।
আসন্ন সি ভিজিল-২৪ মহড়াটি ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে একটি মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সামুদ্রিক নিরাপত্তায় ভারতের নেতৃত্বের অবস্থানকে জোরদার করবে এবং বিস্তৃত সামুদ্রিক সীমান্ত রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে পুনঃপ্রতিপাদন করবে। এই মহড়া থেকে অর্জিত শিক্ষা এবং অন্তর্দৃষ্টিগুলো ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে এবং এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক