কৈলাস মানসারোবর যাত্রা শুরু, সীমান্তবর্তী নদীগুলোর তথ্য বিনিময় এবং ভারত-চীনের সরাসরি ফ্লাইট চালু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে, সোমবার (১৮ নভেম্বর, ২০২৪) রিও ডি জেনেইরোতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) পলিটব্যুরো সদস্য এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এই বৈঠকে দুই নেতা ভারত-চীন সম্পর্কের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন এবং সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্নকরণের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

‘জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে, চীনের সিপিসি পলিটব্যুরো সদস্য এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা ভারত-চীন সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্নকরণের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছি,’ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর, ২০২৪) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।

দুই পক্ষের আলোচনায় যে ‘পরবর্তী পদক্ষেপগুলি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে কৈলাস মানসারোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করা, ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং সীমান্তবর্তী নদীগুলোর তথ্য বিনিময়ের বিষয় উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও মিডিয়া বিনিময়ের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বলে পরে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ)।

‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন যে, আমাদের সীমান্ত এলাকায় বিচ্ছিন্নকরণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে। আলোচনায় ভারত-চীন সম্পর্কের পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে ফোকাস করা হয়। শিগগিরই বিশেষ প্রতিনিধিদের বৈঠক এবং পররাষ্ট্র সচিব ও ভাইস মিনিস্টার মেকানিজমের অধীনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,’ জানিয়েছে এমইএ।

চলতি বছরের ২২ অক্টোবর, কয়েক সপ্তাহের নিবিড় আলোচনার পরে ভারত ও চীনের কর্মকর্তারা সীমান্তে টহলের ব্যবস্থা নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছান বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী। এর একদিন পরে, চুক্তির অধীনে পূর্ব লাদাখের ডেমচোক ও দেপসাং এলাকায় ‘যাচাইকরণ টহল’ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে এমইএ।

২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে রাশিয়ার কাজানে ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠক করেন। বৈঠকে সীমান্ত প্রশ্নে বিশেষ প্রতিনিধিদের শীঘ্রই একটি বৈঠকের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার এবং একটি ন্যায্য ও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।

রিও ডি জেনেইরোর আলোচনায় জয়শঙ্কর কাজান বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘কাজানে আমাদের নেতারা ২১ অক্টোবরের সমঝোতাকে ভিত্তি করে সম্পর্কের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সম্মত হন। মাটিতে সেই সমঝোতার বাস্তবায়ন পরিকল্পনামাফিক এগিয়েছে দেখে আমি আনন্দিত।’

২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান। বহু সংখ্যক চীনা সেনার প্রাণহানি হলেও চীন কখনো সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

পরবর্তীতে সামরিক এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে বহু দফা আলোচনার মাধ্যমে কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নকরণ সম্পন্ন হলেও পূর্ব লাদাখ অঞ্চলের পশ্চিম সেক্টরের এলএসি বরাবর বাকি থাকা সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিচ্ছিন্নকরণ কার্যকর হওয়ার কোনো ঘোষণা হয়নি। অবশেষে এই বছরের অক্টোবর মাসে নতুন চুক্তি অনুযায়ী অগ্রগতি শুরু হয়। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক