সূত্রের খবর অনুযায়ী ভারত ও কুয়েত তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুই দিনের (২১-২২ ডিসেম্বর) কুয়েত সফর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি ছিল ৪৩ বছরে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কুয়েত সফর। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত কুয়েতের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে একটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। কুয়েত ভারতকে অপরিশোধিত তেল ও এলপিজি সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য জ্বালানি অংশীদার হিসেবেও বিবেচিত। পাশাপাশি, কুয়েত থেকে ভারতে বিনিয়োগও রয়েছে।

ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়, যার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, কুয়েতে সবচেয়ে বড় প্রবাসী গোষ্ঠী। তারা কুয়েতের বিভিন্ন খাতে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং দুই দেশের মধ্যে জীবন্ত সেতু হিসেবে কাজ করছে।

সংস্কৃতি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কও সমৃদ্ধ। কুয়েত বর্তমানে উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

কুয়েতের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রদান
কুয়েতি আমির শেখ মেশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ’র আমন্ত্রণে কুয়েত সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার কুয়েতের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার ‘অর্ডার অব মুবারক আল-কবীর’ গ্রহণ করেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর ২০তম আন্তর্জাতিক সম্মান।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই পুরস্কার ভারত-কুয়েতের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব, কুয়েতে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায় এবং ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের প্রতি উৎসর্গ করেন। ৪৩ বছর পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কুয়েত সফরের সময় এই পুরস্কার প্রদান ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে বিশেষ অর্থবহ করে তুলেছে।

১৯৭৪ সালে প্রবর্তিত এই পুরস্কার এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ বুশ এবং ইংল্যান্ডের প্রিন্স চার্লসসহ গ্লোবাল নেতাদের প্রদান করা হয়েছে।

কুয়েতি আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদী কুয়েতি আমির শেখ মেশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এটি দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। বায়ান প্যালেসে পৌঁছানোর পর তাকে কুয়েতি প্রধানমন্ত্রী আহমদ আল-আব্দুল্লাহ আল-আহমদ আল-সাবাহ আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান।

দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্মরণ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বিস্তৃত ও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই প্রেক্ষিতে তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী কুয়েতে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি ভারতীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান। কুয়েতি আমির কুয়েতের উন্নয়নে ভারতীয় সম্প্রদায়ের অবদানের প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী কুয়েতের ‘ভিশন ২০৩৫’ পূরণের লক্ষ্যে নেওয়া নতুন উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেন এবং এই মাসের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত জিসিসি শীর্ষ সম্মেলনের সফল আয়োজনের জন্য আমিরকে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে আরব গালফ কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘অতিথি হিসেবে’ আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।

আমির প্রধানমন্ত্রী মোদীর অনুভূতির প্রতিধ্বনি করেন এবং কুয়েত ও উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি মূল্যবান অংশীদার হিসেবে ভারতের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেন। কুয়েতি আমির কুয়েতের ভিশন ২০৩৫ বাস্তবায়নে ভারতের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদানের প্রত্যাশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী কুয়েতি আমিরকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান।

ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ
প্রধানমন্ত্রী মোদী কুয়েতি ক্রাউন প্রিন্স শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-হামাদ আল-মুবারক আল-সাবাহ’র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে তার সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, ভারত কুয়েতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। দুই নেতা সম্পর্কের অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার বিষয়টি স্বাগত জানান।

দুই পক্ষ জাতিসংঘসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক মঞ্চে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার উপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী আশা প্রকাশ করেন যে, কুয়েতের সভাপতিত্বে ভারত-জিসিসি সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।

কুয়েতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা
প্রধানমন্ত্রী মোদী কুয়েতি প্রধানমন্ত্রী শেখ আহমদ আল-আব্দুল্লাহ আল-আহমদ আল-সাবাহ’র সঙ্গে আলোচনা করেন এবং রাজনৈতিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেন।

দুই নেতা যৌথভাবে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের সাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি, ক্রীড়াক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং কুয়েতের আন্তর্জাতিক সৌর জোটে যোগদান সংক্রান্ত চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

শেষ পর্যন্ত, ভারত ও কুয়েত ঐতিহাসিক সম্পর্ক, দৃঢ় অর্থনৈতিক বিনিময় এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সংযোগ দ্বারা চিহ্নিত একটি প্রাচীন বন্ধন ভাগ করে নেয়। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।