দিল্লি জি২০ সম্মেলনে গৃহীত জনকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল, জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
জি২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগ তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সোমবার (১৮ নভেম্বর, ২০২৪) ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বৈশ্বিক সংঘাতের কারণে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো।

তিনি গ্লোবাল সাউথের চ্যালেঞ্জগুলোর উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। “বিশ্বজুড়ে সংঘাতের কারণে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সংকট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর উপর। তাই আমাদের আলোচনা তখনই সফল হবে যখন আমরা গ্লোবাল সাউথের চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকারগুলোকে সামনে রেখে কথা বলব,” বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্রাজিলের উদ্যোগে গৃহীত “ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোট” গঠনের প্রশংসা করেন এবং এটিকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নিউ দিল্লি জি২০ সম্মেলনে গৃহীত ডেকান উচ্চস্তরের নীতিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।

তিনি আরও বলেন, আফ্রিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ভারত যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে মালাউই, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়েতে মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি।

‘দিল্লি সম্মেলনের জনকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল’
জি২০ সম্মেলনের দুর্দান্ত আয়োজন এবং সফল সভাপতিত্বের জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, “নিউ দিল্লি জি২০ সম্মেলনে গৃহীত জনকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তগুলো ব্রাজিলের সভাপতিত্বে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, নিউ দিল্লি জি২০ সম্মেলন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন এবং যুবশক্তির ওপর জোর দিয়েছে, যা গ্লোবাল সাউথের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের “এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ” স্লোগানটি রিওর আলোচনাতেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

ভারতের ‘মূলে ফেরার’ এবং ‘ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রা’ নীতি
ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভারতের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, গত ১০ বছরে ভারত ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে এসেছে এবং দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছে। এছাড়া, বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৫ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।

নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ৩০ কোটি নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম ফসল বীমা প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটিরও বেশি কৃষক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সুবিধা পেয়েছেন।

কৃষকদের জন্য গৃহীত বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা ১১ কোটি কৃষককে প্রদান করা হয়েছে এবং কৃষকদের জন্য ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

“আমাদের সাফল্যের মূল কারণ হলো আমাদের নীতি: ‘মূলে ফেরা’ এবং ‘ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রা’। আমরা শুধু প্রাকৃতিক এবং জৈব চাষাবাদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি না, বরং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপরও জোর দিচ্ছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক