উভয় দেশই স্বীকার করে যে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক ডিজিটাল সমাধান টেকসই শাসনের মূল চাবিকাঠি।
ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া সরকারি প্রশাসন ও শাসন সংস্কারে সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয় দেশ একত্রিত ও সুসংহত সরকারি সেবা প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং শাসন ব্যবস্থার উন্নতিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এগুলো ছিল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ভারত-অস্ট্রেলিয়া যৌথ কার্যকারী দলের (জেডব্লিউজি) বৈঠকের অন্যতম ফলাফল। ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারতের প্রশাসনিক সংস্কার ও জন অভিযোগ দপ্তরের (ডিএআরপিজি) সচিব ভি শ্রীনিবাস এবং অস্ট্রেলিয়ান পাবলিক সার্ভিস কমিশনার গর্ডন ডি ব্রুয়র। এই বৈঠক ডিজিটাল সরকারি পরিষেবার একীকরণ এবং শাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।

দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ
বৈঠকে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর গুড গভর্নেন্স (এনসিজিজি)-এর মহাপরিচালক সুরেন্দ্র কুমার বাগদে এবং উভয় দেশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার সুনীত মেহতা। বৈঠকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া উভয়েই তাদের নিজ নিজ সরকারি সেবা প্রদানের অগ্রগতির অভিজ্ঞতা বিনিময় করে।

ভারতের উদ্যোগ
ডিএআরপিজির অতিরিক্ত সচিব পুণীত যাদবের নেতৃত্বে ভারতের প্রতিনিধিরা কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ তুলে ধরেন, যেমন: নেক্সট-জেনারেশন কেন্দ্রীভূত জন অভিযোগ নিরসন এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা (সিপিজিআরএমএস): যা অভিযোগ নিরসনকে আরও সহজ করে তোলে।

ন্যাশনাল ই-সার্ভিস ডেলিভারি অ্যাসেসমেন্ট (নেসডা): এটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ই-সেবা প্রদানের মূল্যায়ন ও উন্নয়নের একটি কাঠামো। মেধার মূল্যায়ন, ই-গভর্ন্যান্স এবং সরকারি অফিসে ডিজিটাল রূপান্তরকে জোরদার করার কর্মসূচি।

অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে, কর্মকর্তারা "মাইগভ-ইন্টিগ্রেটেড ডেলিভারি অফ ডিজিটাল গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস" প্ল্যাটফর্মের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা নাগরিকদের পরিষেবাগুলিতে সহজে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সরকারি সেবা প্রদানের দক্ষতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগগুলিও তুলে ধরা হয়।

জ্ঞান বিনিময়ের গুরুত্ব
এনসিজিজির মহাপরিচালক সুরেন্দ্র কুমার বাগদে ভারতের সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি তুলে ধরেন এবং দুই দেশের মধ্যে ধারাবাহিক জ্ঞান বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

মূল সিদ্ধান্তসমূহ
জেডব্লিউজির বৈঠক শেষ হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে: ডিজিটাল সরকারি সেবার একীকৃত ডেলিভারি: উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি পরিষেবা প্ল্যাটফর্মকে সুসংহত করার অঙ্গীকার করেন উভয় পক্ষ। নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য এআই পরিষেবাগুলোর দক্ষতা, অ্যাক্সেসযোগ্যতা, এবং নিরাপত্তা বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

প্রযুক্তি চালিত শাসন সংস্কার: উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে শাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

অংশীদারিত্বের গভীরতা বৃদ্ধি
এই বৈঠক অস্ট্রেলিয়া-ভারত বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা প্রযুক্তি এবং শাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে গভীরতর করতে চায়।

অস্ট্রেলিয়া-ভারত স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড টেকনোলজি পলিসি ইনিশিয়েটিভ (এসএটিপিআই)-এর মতো উদ্যোগগুলিও এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করছে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তর দ্বারা সমর্থিত এই বহু-বছরের প্রকল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে।

জেডব্লিউজির বৈঠকের ফলাফল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি প্রশাসনের উন্নয়নের জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। ভারতের ডিজিটাল রূপান্তর সিপিজিআরএমএস এবং নেসডার মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে চলছে। অস্ট্রেলিয়ার এআই-ভিত্তিক সেবা সমন্বয় ভারতীয় শাসন কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে।

সরকারি প্রশাসন এবং শাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া শুধু তাদের নিজ নিজ নাগরিকদেরই উপকৃত করছে না, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যেও অবদান রাখছে। উভয় দেশই মনে করে, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক ডিজিটাল সমাধানই ২১শ শতাব্দীর টেকসই শাসনের চাবিকাঠি। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক